‘লন্ডন বৈঠকের’ পর জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় দেখা দিয়েছে ইতিবাচক গতি। নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে যেসব কালো মেঘ ছায়া ফেলেছিল, তা অনেকটা কেটে গেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। যদিও দলগুলো প্রকাশ্যে কিছু না বললেও তলেতলে তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফার বৈঠকে নাটকীয় মুহূর্তও ঘটেছে। লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান
তারেক রহমানের সঙ্গে মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকে যে সমঝোতা হয়েছে, তা জামায়াত ও এনসিপি ভালোভাবে নেয়নি। প্রতিবাদস্বরূপ জামায়াত প্রথম দিনে বৈঠকে যোগ দেয়নি। পরে প্রধান উপদেষ্টার অনুরোধে তারা অংশ নেন এবং তিন নেতা বক্তব্য দেন। তবে সিপিবি, ১২–দলীয় জোট ও গণফোরাম নেতা কিছুক্ষণ সভা ত্যাগ করেন। অগ্রগতি এবং স্বাধীনতা সব মান–অভিমান সত্ত্বেও বৈঠকে অগ্রগতি হয়েছে। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে বিধিনিষেধ সরানো হয়েছে। এখন সংসদ সদস্যরা অর্থবিল, সরকারের প্রতি অনাস্থা প্রস্তাব ও যুদ্ধাবস্থা ছাড়া সব বিষয়ে স্বাধীনভাবে কথা বলতে ও ভোট দিতে পারবেন। এই স্বাধীনতার জন্য ৫৩ বছর লেগেছে। তাত্ত্বিকভাবে এটি সাফল্য হলেও দলীয় মনোনয়নের ধারা যদি অপরিবর্তিত থাকে, সুফল তেমন পাওয়া যাবে না। এ টি এম শামসুল হুদা কমিশন স্থানীয় কমিটির তালিকাকে বাধ্যতামূলক করেছিল, যা পরে উঠে যায়। তবে স্থানীয় কমিটিও সবসময় সঠিক সিদ্ধান্ত নাও নেবে। নারী ও উচ্চকক্ষের আসন ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে সংরক্ষিত নারী আসন ৫০ থেকে ১০০ বাড়ানোর বিষয়ে দু–একটি ধর্মভিত্তিক দল ছাড়া সবাই একমত। নির্বাচনের পদ্ধতি নিয়ে দ্বিমত আছে—বিএনপি ও সমমনা দল বর্তমান পদ্ধতির পক্ষপাতী, জামায়াত, এনসিপি ও বাম দল সরাসরি ভোটের পক্ষে। নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগ লন্ডন বৈঠকের পর নির্বাচন কমিশনও সক্রিয় হয়েছে। আচরণবিধি সংশোধন করে খসড়া অনুমোদন দিয়েছে। এতে প্রার্থীরা পোস্টার বাদ দিয়ে বিলবোর্ড, ব্যানার ও ফেস্টুন ব্যবহার করতে পারবে। দলীয় অঙ্গীকারনামা ও এক প্ল্যাটফর্মে সব প্রার্থীর ইশতেহার ঘোষণা করার বিষয়টিও সমর্থনযোগ্য। ৩০০ আসনের সীমানা নির্ধারণের জন্য খসড়া প্রকাশ হয়েছে। ৭৫টি আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণের জন্য ৬০৭টি আবেদন এসেছে। ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা শামসুল হুদা কমিশন অতীতে কিছু সাফল্য দেখিয়েছিল, তবে গ্রামাঞ্চলের আসন কমিয়ে শহরের আসন বৃদ্ধি করার মতো বিতর্কিত পদক্ষেপও হয়েছিল। বর্তমান কমিশনের কাছে আশা করা হচ্ছে, গ্রামাঞ্চলের গুরুত্ব ফিরিয়ে আনবে এবং নির্বাচনী বৈষম্য কমাবে। উপসংহার: যদিও সব বিষয়ে দ্বিমত রয়েছে, কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলো পূর্বের অনড় অবস্থান থেকে সরে এসেছে। এটি ইতিবাচক সংকেত। জাতীয় ঐকমত্য ও সমঝোতার ভিত্তিতেই এখন নির্বাচনের পথ সুগম করা সম্ভব।
সরকারের ঘোষিত সময়সূচি অনুযায়ী, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থাৎ, নির্বাচন আর ছয় মাসেরও কম সময় দূরে। এদিকে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্ণ হলেও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো সন্তোষজনকবিস্তারিত...