৮৩ বছর পর জাপানের খনিতে মিলল কোরীয় শ্রমিকদের অস্থি

জাপানের পশ্চিমাঞ্চলীয় ইয়ামাগুচি প্রিফেকচারে অবস্থিত চোসেই আন্ডারসি মাইন–এ ১৯৪২ সালের দুর্ঘটনায় নিহতদের অস্থি উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে এক বেসরকারি সংগঠন। সংগঠন কিজামু কাই জানিয়েছে, গত দুদিনে কোরীয় ডুবুরিরা খনির পুরোনো স্থানে তিনটি হাত–পায়ের হাড় ও একটি খুলি আবিষ্কার করেছেন। স্থানীয় পুলিশ এগুলো পরীক্ষা করবে, যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় সেগুলো ৮৩

বছর আগে নিহত শ্রমিকদের দেহাবশেষ কি না। যদি সত্যিই প্রমাণিত হয়, তবে এটি হবে আরও ১৩৬ জন কোরীয় জোরপূর্বক শ্রমিক এবং ৪৭ জন জাপানি শ্রমিকের দেহাবশেষ খোঁজার প্রচেষ্টাকে ত্বরান্বিত করার বড় পদক্ষেপ। সংগঠনের প্রতিনিধি ইয়োকো ইনোউয়ে বলেন, “আমি এই দিনের অপেক্ষায় ছিলাম।” ঐতিহাসিক পটভূমি চোসেই মাইন চালু হয় ১৯১৪ সালে। ১৯৪২ সালের ফেব্রুয়ারিতে খনির একটি শ্যাফট ধসে পড়ে পানিতে তলিয়ে যায় এবং ভেতরে থাকা ১৮৩ শ্রমিক নিহত হন। দুর্ঘটনাটি দীর্ঘদিন উপেক্ষিত ছিল। পরে ১৯৯১ সালে কিছু নাগরিক উদ্যোগ নিয়ে ভুক্তভোগীদের স্মৃতিফলক তৈরির কাজ শুরু করেন এবং খনির স্থান সংরক্ষণের জন্য তদন্ত চালান। ইতিহাসবিদরা জানান, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ও চলাকালে জাপান লক্ষাধিক কোরীয় শ্রমিককে জোরপূর্বক কাজ করতে বাধ্য করেছিল, কারণ তখন অধিকাংশ জাপানি পুরুষকে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হয়েছিল। সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট গত সপ্তাহে টোকিওতে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিউং–এর মধ্যে বৈঠক হয়। সেখানে নিরাপত্তা ও বাণিজ্যে সহযোগিতার ওপর জোর দেওয়া হলেও অতীতের ঐতিহাসিক ইস্যু এড়িয়ে যাওয়া হয়। এদিকে, জাপান সরকারের প্রধান মন্ত্রিপরিষদ সচিব ইওশিমাসা হায়াশি নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন এবং পুলিশি পরীক্ষার ফলাফলের অপেক্ষায় থাকার কথা বলেছেন। তবে সরকার এখনো খনিতে পানির নিচে নিরাপদে অনুসন্ধানের ব্যাপারে কোনো বিশেষজ্ঞ মত নেয়নি। সংগঠন কিজামু কাই নিজেদের উদ্যোগে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে। সমালোচকদের মতে, জাপান সরকার দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধকালীন নৃশংসতা, যেমন কোরীয় নারীকে ‘কমফোর্ট উইমেন’ বানানো ও কোরীয়দের জোরপূর্বক শ্রমে নিযুক্ত করার ঘটনা এড়িয়ে এসেছে।